News

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী “করোনাথন-১৯” শীর্ষক হ্যাকাথন

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত “করোনাথন-১৯” হ্যাকাথনের উদ্বোধন হলো আজ। তিন দিনব্যাপী (২-৪মে) অনুষ্ঠিতব্য এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি আজ শনিবার (২মে) ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এবং ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের প্রধান ও করোনাথন-১৯ এর আহ্বায়ক ড. শেখ মোহাম্মদ আল্যায়ার । অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা জাব্বার বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদেরকে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে. চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ একসঙ্গে লকডাউন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ইতিপূর্বে পৃথিবীতে ঘটেনি। তবে সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ এ পর্যায়ে এসেছে তার মেধা ও প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে। এবারের সংকটও মানুষ তার অসীম মেধা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোকাবিলা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসময় মন্ত্রী ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান কারোনা হ্যাকাথনের মতো একটি সময়পোযোগী প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তোমরা এখনই করোনার ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলবে এমনটা মনে করি না। তবে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কী করে বড় বড় সমস্যার সমাধান করা যায় তার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় ঘটল। ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আরও অনেক দুর্যোগ আসবে, মহামারি আসবে, তখন এই তরুণরা তাদের মেধা ও প্রযুক্তিকে যেন মানব সভ্যতা রক্ষার কাজে ব্যয় করে, মন্ত্রী সেই আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদার বলেন, করোনা সমস্যার সমাধান কী তা আমরা এখনো জানি না। পৃথিবীর সবাই এর সামাধান খুঁজছে। আমরা সেই সমাধান খোঁজার কর্মযজ্ঞে সারা পৃথিবীর তরুণদেরকে সম্পৃক্ত করার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। ইতিমধ্যে এই প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে তরুণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদার আরো বলেন, এই তরুণদের হাত ধরেই করোনা সমস্যার সমাধান আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এসময় তিনি এই হ্যাকাথন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা Artificial Intelligence প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপকে মোকাবেলার জন্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রযুক্তিবিদদেরও একটা দায়বদ্ধতা আছে ; আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও) প্রযুক্তি হতে পারে প্রযুক্তিবিদদের অন্যতম একটা হাতিয়ার। সে লক্ষ্যেই করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় “করোনাথন-১৯” হ্যাকাথনের আয়োজন, যেখানে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর তরুণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন। এই তরুণরা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তত্তাবধানে করোনা মোকাবেলার প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করবেন এবং বিজয়ীগণ পুরস্কার হিসেবে পাবেন ২৫০০০ ইউএস ডলার।

ইতিমধ্যে ভারত, পাকিস্থান, ইরান, তাইওয়ান, নাইজেরিয়া, জাপান, মেক্সিকো, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং স্বাগতিক বাংলাদেশ থেকে শতাধিক দল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই ক্যাটাগরিতে—জুনিয়র ও সিনিয়র ক্যাটাগরি। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য জুনিয়র ক্যাটাগরি এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সিনিয়র ক্যাটাগরি।

কভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য সমস্যার সমাধান সনাক্তকরণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলো যথা স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি ইত্যাদির সমাধান নির্ণয় করা, শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করা এবং বর্তমান সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীগণ যেন তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের যথাযথ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করাই এই “করোনাথন-১৯” এর উদ্দেশ্য।

এই হ্যাকাথনে ঘরে বসেই অংশগ্রহন করছেন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা। করোনার প্রকোপের উপর মূলত কেন্দ্র করেই AI/ML/IOT/ Robotics এবং Big Data প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা/খাদ্য ও পুষ্টি/ শিক্ষা সহ আরো অন্যান্য বিষয়ের উপর সমাধান বের করে আনাই এই করোনাথন-১৯ এর মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের জমা দেয়া প্রকল্প বা সমাধানগুলি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচিত সমাধানগুলোকে আরো পরিশালিত করার জন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আর্থিক অনুদান সহ উন্নত ল্যাব সেবা প্রদান করবে।

প্রতিযোগিতার বিস্তারিত জনতে ভিজিট করুন: https://coronathon19.daffodilvarsity.edu.bd/
ক্যাপশনঃ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত তিনদিনব্যাপী দেশের প্রথম অনলাইন হ্যাকাথন ”করোনাথন-১৯” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে করোনা মোকাবেলায় চীনের সঙ্গে কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে দেশে রোবট দিয়ে ওষুধ, খাদ্য সরবরাহ এবং ড্রাইভিং করোনা টেস্ট ব্যবস্থার পাশাপাশি টেস্টের ফলাফল পেতে ৫জি ব্যবহার করা হয়েছে। কেবল স্বাস্থ্য সেবার ওষুধই নয় এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি জড়িত। যারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য এটি মেধা খাটানোর সময়। কেননা ইতেোমধ্যেই বিগডেটা, রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে চীন করোনার বিরুদ্ধে সফলতা পেয়েছে।

করোনায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, করোনা এসে কৃষক থেকে দিনমজুরের জীবন বদলে দিয়েছে। শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই সকলকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে অংশগ্রহণ ও একত্রিত করেছে।

‘মোবাইল, ইন্টারনেট প্রযুক্তি না থাকলে জীবনধারণই ভাবনার বিষয়’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অবস্থা যাই হোক না কেন পৃথিবীর অন্য মানুষরা সেভাবে জীবনযাপন করছে আমরাও সেভাবে পারছি। বিমান স্থলবন্দর বন্ধ থাকলেও আমাদের টেলিযোগাযোগ সচল রয়েছে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, সামনের পৃথিবী ডিজিটাল পৃথিবী। সামনের প্রযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডটকম যুগে আমরা অ্যাপস বানিয়েছি। কিন্তু সামনের দিনগুলো আরো বড় চ্যালেঞ্জের। পৃথিবী নতুন রূপ লাভ করবে। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে মেধা প্রয়োগের অন্যতম হাতিয়ার হবে প্রযুক্তি।

Leave a Reply