নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই স্বাধীন দেশে ৭ কোটি মানুষের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্রমতে, দেশে এই সময়ে ১৬৯.১ মিলিয়ন (১৬ কোটি ৯১ লাখ) মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে ৫০.৫ শতাংশ পুরুষ, ৪৯.৫ শতাংশ নারী। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬১.৫ শতাংশ গ্রামে এবং ৩৮.৫ শতাংশ শহরে বাস করেন। আর শিক্ষিত মানুষের হার ৭৪.৭ শতাংশ। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন-মান আরও উন্নত এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্ব প্রদান করেছে। যার ফলে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের স্পর্শে দেশের মানুষ ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থার কল্যাণে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ কী?
২০২১ সালটি বাংলাদেশের স্বাধীতার ৫০ বছর পূর্তি বছর। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কথা উল্লেখ করে। সে লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত ‘রূপকল্প : ২০২১’ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চারটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, সারা দেশে ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়া, ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিল্পখাত গড়া। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উৎপাদন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া ও জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি উন্নত দেশ গড়ে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান লক্ষ্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট
গত এক দশকে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২ গুণ। বিটিআরসির দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের মে মাসে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজারে। ব্যবহারকারীর বড় অংশই দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, যাদের বয়স ১৮-৪০ বছর। সহনীয় ও কম দামে গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সরকার সারা দেশে ইন্টারনেটের দাম ক্রমে কমিয়ে আনছে। যাতে সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের প্রাযুক্তিক দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে পারে; সেই সাথে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে; ঘরে বসে অনলাইনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কম খরচে দ্রুত পেতে পারে। ডাটারিপোর্টালের তথ্যমতে, দেশের ৪৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৪ কোটি) মানুষ নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ইনফো-সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ জনপদে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে এ প্রকল্পে ১৮৪৩৪ সরকারি দপ্তর ও ২৬০০ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ১০০০ অফিসে ডাটা কানেক্টিভিটি এবং ১৬০০ অফিসে ভিপিএন/এমপিএলএস সার্ভিস দেয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিটিসিএল দেশের ৬৪টি জেলার ৪৫৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২২৯টিতে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করেছে। এরই মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৫টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশে ফাইভ-জি চালুর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজ এবং ৩৩০০-৩৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

২০১৮ সালের ১১ মে উৎক্ষেপিত দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রণী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিণত হয় বিশ্বের ৫৭তম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী দেশে। বিএস-১ উপগ্রহটি ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার সজ্জিত হয়েছে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথের অবস্থান থেকে। কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল।
স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাত্রা শুরুর পর যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি বিক্রি হয়েছে, সেই অনুপাতে মাসিক আয় ১০ কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) সূত্রমতে গত দুই বছরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারিতে স্যাটেলাইটটি বুঝে পাওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ ক্যাপসিটি বিক্রি হয়েছে।
বর্তমানে দেশের ৩৫টি টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে টিভি চ্যানেলগুলোকে মাসে ১৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হতো। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১কে প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হবে ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকা।
এ উপগ্রহ-মাধ্যমে আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পেরেছি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মেকাবেলায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে। বিসিএসসিএল দেশের ১৭টি ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এবং আরো ৩৪টিতে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনগণের হাতের নাগালে ডিজিটাল সেবা

সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ (ইউডিসি) গড়ে তুলে গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ করছে। সেই সাথে উদ্যোগ নিয়েছে গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির। যাতে গ্রামের মানুষ নিজেদের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি করতে পারে এবং শহর থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ঘরে বসে অনলাইনে কিনতে পারে। ৪,৫৪৭টি কেন্দ্রে মোট ৯,০৯৪ তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তার আত্ম-কর্মসংস্থান হয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের ফলে সাধারণ মানুষ এখন সহজে, কম খরচে ও ঝামেলাহীনভাবে প্রায় ৬০ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা ইউডিসি থেকে পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ কোটি সেবা দেয়া হয়েছে। সব সরকারি দপ্তরের মধ্যে আন্তঃপরিবাহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। ২৫৪টি এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদে ইউডিসি স্থাপনের ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে। ইউআইএসসি’র সফল অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে দেশের ৩১৯টি পৌরসভায় ‘পৌর ডিজিটাল সেন্টার’ (পিডিসি) ও ১১টি সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে ৪০৭টি ‘নগর ডিজিটাল সেন্টার’ (সিডিসি) স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘরকে রূপান্তর করা হয় ডিজিটাল ডাকঘরে। এসব ডাকঘরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ কমপিউটারবিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা ও অনলাইনে বিভিন্ন ফরম পূরণসহ দেশ-বিদেশের প্রিয়জনদের সাথে ভিডিও যোগাযোগ করতে পারছেন।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসেবা, জরুরি সহায়তা ও ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্য জানতে ওপেন করা হয়েছে ৩৩৩ নম্বর। নাগরিক নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’।
হ্যালো, এটা কি ৯৯৯

৯৯৯। জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর। যেকোনো বিপদে পড়লে, সাইবার অপরাধের শিকার হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে দ্রæত সেবা পাওয়া যায়। মানুষের বিপদে সহায়ক হিসেবে যুক্ত হওয়া নতুন এই সেবা পরিচালিত হয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে। নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯। দুর্ঘটনায় সহায়তা, বাল্যবিবাহ রোধ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯-এ তথ্য দিয়ে সাহায্য পাচ্ছেন লাখো মানুষ। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবাও পাওয়া যাচ্ছে।
ডিজিটাল শিক্ষা

দেশে তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা সম্প্রসারণ, মান সম্মত শিক্ষা অর্জন এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর কর্তৃক ‘দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের অনুমোদনক্রমে ডিজিটাল ল্যাবসমূহের নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’। ইতিমধ্যে ৪০০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান), ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ১৫টি ল্যাবসহ সর্বমোট ৪১৭৬টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের সংসদ সদস্যদের তালিকার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন করে ৫০০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

উদ্ভাবনী সংস্কৃতিতে তরুণদের উৎসাহদান
ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে উদ্ভাবনী সংস্কৃতি চলমান রাখা ও উদ্ভাবনী আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ও অন্যান্য তহবিলের মাধ্যমে উদ্ভাবনী আইডিয়াসমূহকে প্রকল্পরূপে বাস্তবায়ন করার জন্য অর্থায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৫৯টি আইডিয়াকে তহবিল দেয়া হয়েছে। সারা দেশে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিবন্ধিতা, পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, জিটুবি ও জিটুসি সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩৫০০টি ছোট-বড় উদ্ভাবনী প্রকল্পের মধ্যে ১৭২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ৩০টি জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২টি গেম ও অ্যাপস টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তত্ত¡াবধানে চালু হয়েছে Skills for Employment Investment Program (SEIP)-এর মতো আইটি প্রশিক্ষণ। SEIP পরিচালনা করছে গত কয়েক বছর ধরে দেশব্যাপী দক্ষ মেধাবীতরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার তৈরির কার্যক্রম। আঙ্কটাডের ২০১৯ সালের ‘ডিজিটাল ইকোনমি রিপোর্ট’ মতে, বাংলাদেশের ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার প্রতিবছর ১০ কোটি ডলার বিদেশি মুদ্রা আয় করছে। অপরদিকে ২০২০ সালের আইএলও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ১৩ শতাংশ বাজার বাংলাদেশের দখলে।
জাতীয় ডাটা সেন্টার

বর্তমানে ১৬ কোটি ৯১ লাখ মানুষের বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ তথ্য ও ডাটা তৈরি হচ্ছে। এই তথ্য ও ডাটার নিরাপত্তার কথা ভেবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে টায়ার ফোর ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এই ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন। আগারগাঁও বিসিসি ভবনে টায়ার থ্রি সার্টিফাইড জাতীয় ডাটা সেন্টার এবং যশোরে ডিজাস্টার রিকোভারি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় ডাটা সেন্টার টায়ার থ্রি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে মেইল ডোমেইন, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং, কো-লোকেশন সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস ইত্যাদি সেবা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬২৫টি ডোমেইনে সর্বমোট ৯৩ হাজার ইমেইল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং ডাটা সংরক্ষণ ক্ষমতা ১২ পেটাবাইটে বাড়ানো হয়েছে।
হাই-টেক পার্ক ও হার্ডওয়্যার শিল্প

আইসিটি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ৭টি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে দেশি-বিদেশি ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ৫টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া দেশের ১২টি জেলায় হাই-টেক/আইটি পার্ক স্থাপন এবং ৮টি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণকাজ চলমান। কমপিউটার বিক্রেতা ও আমদানিকারকদের হিসাব মতে দেশে রয়েছে ৫.৪৫০ মিলিয়ন (৫৪ লাখ ৫০ হাজার) ল্যাপটপ এবং ৪.৬১০ মিলিয়ন (৪৬ লাখ ১০ হাজার) কমপিউটার ব্যবহারকারী।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসি’র ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭১.৮৮৫ মিলিয়ন (১৭ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার)। গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) সূত্রমতে, বাংলাদেশের ৪১ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সে হিসাবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭১.৩৫০ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার)। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন তথা বিএমপিআইএ’র তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন মোবাইল সেটের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৩ কোটি। এর মধ্যে ৯০ লাখের মতো স্মার্টফোন এবং ২ কোটি ৬০ লাখ ফিচার ফোন। বিটিআরসির সূত্রমতে বর্তমানে দেশে ১৩টি মোবাইল ফোন কারখানা রয়েছে।
ডিজিটাল কমার্স

মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর উদ্যোগে ২০১২ সালে দেশে প্রথম ‘ই-কমার্স মেলা’ আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সহায়ক ভ‚মিকা পালনের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ই-ক্যাব)। ২০১৫ সালে ই-ক্যাব সংগঠন হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন লাভ করে। তখনই ই-ক্যাবের উদ্যোগে এবং আইসিটি ডিভিশনের তত্ত¡াবধানে শুরু হয় ই-কমার্স নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের কাজ, যা ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ নামে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত¡াবধানে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৯’ নামে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৪ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’। নির্দেশিকাটিতে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে।
ই-ক্যাবের মাধ্যমে দেশের ই-কমার্স খাত যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সুফল ভোগ করছে। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার তান্ডব চলার সময়ে ‘ডিজিটাল কোরবানির হাট’-এর মাধ্যমে ঘরে বসে কোরবানির গরু কেনার সুযোগ ছিল দেশের মানুষের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ। ই-ক্যাবের তথ্যমতে, দেশে বছরে ই-কমার্স খাতে বা অনলাইন কেনাকাটায় ১ কোটি ৭২ লাখ গ্রাহক তৈরি হয়েছে। একই সাথে প্রায় তিন লাখ কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সফটওয়্যার ও বিপিও খাত
দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা টাকার হিসেবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস ও সফটওয়্যার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হচ্ছে। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোর ক্ষেত্রে এখনো বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা থেকে গেছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে। দেশের সফটওয়্যার খাতে বেশি চাহিদা রয়েছে ইআরপি, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরিসহ ডিজিটালাইজেশনের কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যার।
বিপিও খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) মতে, বর্তমানে দেশে-বিদেশে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে, এই খাতে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। বিপিও অর্থ বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং। আউটসোর্সিং বলতে শুধু কল সেন্টার আউটসোর্সিং নয়। টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, হাসপাতাল, হোটেলের ব্যাক অফিসের কাজ, এইচআর, আইটি, অ্যাকাউন্ট সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার বিষয়টিকে সাধারণভাবে বিপিও বলে পরিচিত।
মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা
প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে, যা মূলধারার ব্যাংকিং সেবা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। বর্তমানে প্রতিদিন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৮টি ব্যাংকে এ সেবা চালু আছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব-সৃষ্ট বৈশি^ক মহামারীর সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে নগদ অর্থ সহায়তার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএএমএস), যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এপ্রিল ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাাউন্ট সংখ্যা ৯৯.৩০ মিলিয়ন (৯ কোটি ৯৩ লাখ)। দেশে ইন্টারনেট ব্যাংক ইউজারের সংখ্যা ২.৭৪২ মিলিয়ন (২ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার) এবং কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২.২০০ মিলিয়ন (২ কোটি ২২ লাখ)।
চালান অটোমেশন
সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা প্রদানে ব্যবহৃত চালানকে সম্পূর্ণরূপে অটোমেশন করা হয়েছে। এতে ঘরে বসেই ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অনলাইনে জমা দেয়া যায়। ফলে সরকারি সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সেবা ফি প্রদানের প্রক্রিয়া সহজসহ চালানের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত হবে এবং আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন
ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিক করতে ভ‚মি মন্ত্রণালয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প গত বছর থেকে শুরু করেছে। শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। প্রকল্প দুটির একটি হলো ‘ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প’। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ১ হাজার ১৯৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয়টি ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করার জন্য ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যাশিত সেবাগ্রহীতা ভ‚মি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে মোবাইল বা ইন্টারনেটে সেবা পাবেন।
ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭টি বিভিন্ন ধরনের ভ‚মি সেবা প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে। ভ‚মির সব সেবাই ‘ল্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস ফ্রেমওয়ার্ক’ সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে একই কাঠামোয় নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি একটি আন্তঃপরিচালনযোগ্য ডাটাবেজ তৈরি করে সরকারের অন্যান্য সেবার সাথে সমন্বয় করা হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করার জন্য ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ‘ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পে স্যাটেলাইট ও ড্রোনের মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করবে। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারা দেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১০টি জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৮টি মৌজা ম্যাপের ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া পটুুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় এসএ জরিপের পর আরএস জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই দুটি জেলার ১৪টি উপজেলায় জরিপ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ উপর্যুক্ত ‘ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পটি ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে।
ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়ন

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ডিজিটাইজেশন করার লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং বিসিসির তত্ত¡াবধানে গত বছর থেকে চার বছর মেয়াদি ই-জুডিশিয়ারি শীর্ষক একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিচার কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা হবে। দেশের প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্টে পরিণত করা হবে এবং আটক দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে হাজির না করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টসহ অধস্তন আদালতের সবকার্যক্রম অটোমেশন এবং নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মামলার বর্তমান অবস্থা, শুনানির তারিখ, ফলাফল এবং পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিচারপ্রার্থীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া করোনাকালীন ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৮৭টি নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিচার বিভাগের জন্য তৈরি এ প্ল্যাটফর্মে একই সাথে শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি সুরক্ষিত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ হাজারেরও বেশি জামিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ এবং ১১ হাজারের বেশি ভার্চুয়াল শুনানি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় নয় হাজার আইনজীবী এ প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধিত হয়েছেন।
ডিজিটাল আইন
ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন প্রতিহত করা এবং ডিজিটাল অঙ্গনে নিরাপত্তার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রথম প্রণয়ন করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। এরপর এই আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮-তে সংসদে কণ্ঠভোটে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ পাস হয়। আইন প্রয়োগ ও দ্রæত বিচারের লক্ষ্যে দেশের সব বিভাগে গঠন করা হয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে ডিজিটালি চলছে অফিস-আদালত। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অফিস চালাতে নতুন আইনের দরকার না হলেও বিচারকাজ চালাতে অধ্যাদেশ জারি করতে হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকে শুধু মহামারী বা জরুরি পরিস্থিতিতে নয়; যেকোনো সময় যেকোনো কাজ ডিজিটালি করতে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ‘ডিজিটাল গভর্ন্যান্স আইন’-এর খসড়া তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে এই খসড়া প্রকাশ করে তার ওপর মতামত চেয়েছে। এই আইন পাস হলে চিঠি বা দলিলে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর দেয়া যাবে। সরকারি দপ্তরে আদায়যোগ্য অর্থ আদায় করা যাবে ডিজিটালি।
গ্লোবাল সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ২৫ ধাপ উন্নতি
জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন তথা আইটিইউ’র সাইবার নিরাপত্তা সূচক (সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স ভার্সন ৪, ২০২১) সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এবার ২৫ ধাপ এগিয়ে আগের ৭৮তম অবস্থান থেকে ৮১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট নিয়ে ৫৩তম স্থানে এসেছে বাংলাদেশ। তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলোর মৌলিক সাইবার হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুতি এবং সাইবার ঘটনা, অপরাধ ও বড় ধরনের সংকট ব্যবস্থাপনায় তৎপরতা মূল্যায়ন করে সূচকটি তৈরি করেছে আইটিইউ। আইটিইউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সূচক অনুযায়ী এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল র্যাঙ্কিংয়ে ১১তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
সবশেষ
ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ছাড়াও প্রশাসন, ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা এবং গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। দেশি এবং আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানগুলো থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ ক্রমেই রূপান্তরিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ২০২১ সালের ব্যবহারকারীদের ফ্যাক্ট
এক : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসি’র ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭১.৮৮৫ মিলিয়ন (১৭ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার)।
দুই : গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) সূত্রমতে, বাংলাদেশের ৪১ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সে হিসাবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৭১.৩৫০ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার)।
তিন : বিটিআরসির ২০২১ সালের তথ্যমতে, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১৫.৪৩০ মিলিয়ন (১১ কোটি ৫৪ লাখ৩০ হাজার)।
চার : ডাটারিপোর্টালের তথ্যমতে, দেশের ৪৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৪ কোটি) মানুষ নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।
পাঁচ : বাংলাদেশ ব্যাংকের এপ্রিল ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্ট ৯৯.৩০ মিলিয়ন (৯ কোটি ৯৩ লাখ)।
ছয় : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে দেশে ইন্টারনেট ব্যাংক ইউজার ২.৭৪২ মিলিয়ন (২ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার)।
সাত : বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, বাংলাদেশে ব্যাংক কার্ড ব্যবহারকারী ২২.২০০ মিলিয়ন (২ কোটি ২২ লাখ)।
আট : ই-ক্যাবের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ই-কমার্স গ্রাহক ১৭.২০০ মিলিয়ন (১ কোটি ৭২ লাখ)।
নয় : কমপিউটার বিক্রেতা আমদানিকারকদের হিসাব মতে, দেশে রয়েছেন ৫.৪৫০ মিলিয়ন (৫৪ লাখ ৫০ হাজার) ল্যাপটপ ব্যবহারকারী।
দশ : কমপিউটার বিক্রেতা ও আমদানিকারকদের হিসাব মতে, দেশে রয়েছেন ৪.৬১০ মিলিয়ন (৪৬ লাখ ১০ হাজার) কমপিউটার ব্যবহারকারী।
ফিডব্যাক : [email protected]
Leave a Reply