News

ই-ক্যাবকে জড়িয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্বলিত প্রেস রিলিজ সংবাদ আকারে প্রচারের প্রতিবাদ।

বাংলাদেশের ই-কমার্সের উন্নয়নে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এজন্য ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ কর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিগত ২৪ আগষ্ট বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদ ই-ক্যাবের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। 

সংবাদ মাধ্যমে সংবাদটি প্রেস রিলিজের বরাত দিয়ে ছাপা হলেও ‘‘প্রেস রিলিজ’’ আকারে না ছেপে ‘‘নিজস্ব প্রতিবেদক’’ ও ‘‘ জৈষ্ঠ প্রতিবেদক’’ পর্যায়ে প্রতিবেদন বা সংবাদ আকারে ছাপা হয়েছে। অথচ তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা বা স্পর্শকাতরতা বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এড়িয়ে গেছেন। যে এসোসিয়েশন এর প্রেস রিলিজ ছাপা হয়েছ তা অনুমোদিত এসোসিয়েশন কিনা এবং সংশ্লিষ্ঠ এসোসিয়েশন এর সাথে ই-কমার্সের কি সম্পর্ক তাও সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। 

প্রেস রিলিজটি সংবাদ আকারে ছাপা হলেও ই-ক্যাবকে নিয়ে পরিবেশিত সংবাদে ই-ক্যাবের কোনো বক্তব্য তুলে ধরা হয়নি। সংবাদটি বিভিন্ন মাধ্যমে হবহু একটি অন্যটি থেকে কপি করেছে। একটি প্রেস রিলিজ যেভাবে প্রকাশ করা উচিৎ সেভাবে না ছেপে সংবাদ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে এবং স্পর্শকাতর, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য থাকা সত্বেও তা কোনো দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। 

বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেস রিলিজ এর বরাতে “ই-কমার্সের নৈরাজ্যের দায় ই-ক্যাব নেতাদেরও’’ “ই-কমার্সের নৈরাজ্যের দায় ই-ক্যাব নেতারা এড়াতে পারেন না‘‘ ইত্যাদি শিরোনামে  উদ্ভট ও হাস্যকর তথ্য তথ্য সংক্রান্ত প্রেস রিলিজ প্রকাশ সংবাদ আকারে প্রকাশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

প্রথমত: সংবাদে বলা হয়েছে ‘‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সহায়তা নিয়েছে।’’ এ ধরনের তথ্যসূত্র ব্যতিত ‘‘বিভিন্ন মাধ্যম’’ ব্যবহার করার পর সংবাদ মাধ্যমের বোঝা উচিত এই তথ্য কতটা দূর্বল, অপেশাদার ও শিশুসুলভ। সরকার কেন বা কোন নিয়মে কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে ৯০০ কোটি টাকা দিবে? সরকার কোনো খাতের ব্যবসায়ীদের এতটাকা দিলে সেটা নিশ্চই গোপন থাকতনা। সংবাদ মাধ্যম অবশ্যই জানতে পারত। 

যেকেউ কিছু একটা লিখে প্রেস রিলিজ আকারে পাঠাবে আর সংবাদ মাধ্যম তা কোনো দায়িত্ব বিবেচনা না করে প্রকাশ করবে, এমনটা গণমাধ্যমের কাছ থেকে কেউ আশা করেনা। এধরনের সুযোগ থাকলে স্বার্থান্বেষী মহল গণমাধ্যমকে স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যা সমাজের জন্য নানাবিধ সমস্যার কারণ হতে পারে। 

দ্বিতীয়ত: ‘‘সংগঠনের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়’’। এই তথ্য দেখার সাথে সাথে প্রতিবেদক এর বোঝা উচিত ছিলো যারা এ ধরনের কথা বলে ই-ক্যাব সম্পর্কে বা ই-কমার্স সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ই-ক্যাবের ওয়েবসাইটে এর মেম্বারশিপ ফি উল্লেখ করা আছে। যা যে কেউ দেখে নিতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে ই-ক্যাবের বার্ষিক কোনো আইটি এসোসিয়েশন এর চেয়ে অনেক কম। সবচেয়ে বড় কথা কোন এসোসিয়েশন এর সদস্যরা তার এসোসিয়েশনকে কতটাকা বার্ষিক ফি দেয়। সেটা সংশ্লিষ্ঠ এসোসিয়েশন এর সদস্যদের বিষয়। তারপরও যদি এটা নিয়ে আপত্তি থাকে তাহলে ‘‘বিপুল পরিমাণ’’ শব্দ ব্যবহার করা হয়, তখন যে বা যারা এ ধরনের যাচাই ব্যতিত উড়ো কথার উপর প্রেস রিলিজ পাঠায় এবং যারা ছাপে তারা কেউ এ সংক্রান্ত কোনো গুজব ছড়ানোর দায় এড়াতে পারে  না। 

তৃতীয়ত: ‘‘সরকারের সাথে তব্দিরবাজিতে ব্যস্ত থাকে’’ এ ধরনের অভিযোগ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন করে তখন বুঝতে হবে একটি ট্রেড এসোসিয়েশন এর কাজ বা দায়িত্ব সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নন অথবা বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। একটি এসোসিশেন সরকারের সাথে নীতি পলিসি ও খাতের দাবী দাওয়া নিয়ে কাজ করে। এটাকে তদ্বিরবাজির বলে ই-ক্যাবের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  সাথে সাথে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশের বিষয়ে ই-ক্যাব নিন্দা জানাচ্ছে। 

কোনো পেশাদার এসোসিয়েশন এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। এটা মনে রাখা উচিৎ কোনো অনুমোদিত এসোসিয়েশন আরেকটি এসোসিয়েশন এর সাথে আলোচনায় বসার সুযোগ নিতে পারে। তারা পত্রিকায় মিথ্যা গুজব ছড়ানোর মতো অনৈতিক চিন্তা করবেনা।

পঞ্চমত:  বলা হয়েছে ‘‘অনৈতিক লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ এবং তার কর্তা ব্যক্তিদের গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করে গ্রাহকদের প্রাপ্য ন্যায্য দাবি পরিশোধের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত সুরাহা না করতে পারায় নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা কোনোভাবেই দায়মুক্তি পেতে পারে না বলে আমরা মনে করি।’’ যেকারো বোঝার বাকী থাকে না যে কোনো কিছু না জেনে না বুঝে অথবা জেনে বুঝে কেউ সচেতনভাবে এ ধরনের ছেলেভুলানো গল্প তৈরী করা হয়েছে। কারণ ই-ক্যাব বিগত বছরসমূহে ই-ক-কমার্স খাতের উন্নয়নে যেসব কাজ করেছে তা সকলের জানা। 

গত বছর এ ধরনের অভিযোগের শুরুতে ই-ক্যাব একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত করেছে এবং তার প্রতিবেদন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে দিয়েছে। তারই আলোকে ই-ক্যাব সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে ‘‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’’ বাস্তবায়নে কাজ করছে। নির্দেশিকা নিয়ে ই-ক্যাবের কর্মতৎপরতা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসক্রো সেবার দাবীও ই-ক্যাব উত্থাপন করেছে। 

ই-ক্যাব একমাত্র এসোসিয়েশন যারা নিজেরা স্বপ্রনোদিত হয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে সদস্যদের নামে আসা অভিযোগগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো সমাধানের জন্য সদস্যদের ক্রমাগত নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। ই-ক্যাব সম্পর্কে কোনো ব্যক্তি না জানতে পারে কিন্তু সংবাদ মাধ্যম যখন জেনে শুনে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে তা খুব অবাক করার মতো ব্যাপার। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর ও এজেন্সিকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে।  এছাড়া ই-ক্যাব ১৬ টি প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ৪টি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করেছে এবং আরো ৯টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে অধিকতর তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। 

এরপরও যারা ই-ক্যাবকে জড়িয়ে বক্তব্য রাখে তারা এই বিষয়ে অজ্ঞতার পরিচয় দেয় এবং যারা জেনে না জেনে মিথ্যে তথ্য ছড়ায় তারা পরিকল্পিতভাবে ই-কমার্স সেক্টরের নামে বদনাম করে এই উন্নতিকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চায় তাই সংবাদ মাধ্যমের উচিত এদের বিষয়ে সতর্ক থাকা। ই-ক্যাবের সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এই অপচেষ্টা ই-ক্যাব কোনোভাবেই মেনে নিবেনা। 

কোনো অনুমোদিত এসোসিশেন থাকে তাদের কোনো বক্তব্য বা আলোচনার বিষয় থাকলে তারা সরাসরি ই-ক্যাবের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কোনো তথ্য থাকলে তা ই-ক্যাবকে বা সরকারকে জানাতে পারেন। আলোচনার বিষয় হলেও ই-ক্যাবের দরজা তাদের জন্য খোলা রয়েছে। তা না করে কেউ যখন উদেশ্য প্রনোদিত ভাবে গুজব ছড়ায় তখন বুঝতে বাকী থাকেনা যে, এর মধ্যে কোনো হীন ও নোংরা স্বার্থ রয়েছে।
তাই সংবাদ মাধ্যমের কাছে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি এবং ক্রেতা এবং প্রকৃত ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার আহবান জানাই।

Leave a Reply