News

নো-কমেন্ট’ পাঠাও সিএফও’র লাইসেন্স ছাড়াই কুরিয়ার ব্যবসা করছে পাঠাও

আর ছাড় দেবে না মন্ত্রণালয়

লাইসেন্স ছাড়াই যারা কুরিয়ার ব্যবসায় করছে শিগগির তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে ডাক বিভাগ। শত বছরের পুরনো পোস্টাল আইন, ১৮৯৮ দিয়ে চলা কুরিয়ার সার্ভিসের কিছু বিধিমালার কয়েকটি ধারা সংশোধন করে তৈরি করা কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা, ২০১১ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়েই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, আমার এখানে যারা কর্তৃপক্ষ আছে তাদের আমি নির্দেশ দিয়েছি নীতিমালা করে তালিকা তৈরি করতে। দরকার হয় আমি তাদের দরজায় তালা লাগাব। পত্র নির্দেশনা লাইসেন্স ছাড়া কেউ কুরিয়ার ব্যবসায় করতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রেট আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসায় করতে পারছে মন্তব্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ঢিলার চক্কর আর অদক্ষতা মিলিয়ে আজকের অবস্থা বিরাজ করছে। যাই হোক, যখনি বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমি সাথে সাথে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। যদিও এখনো ঢিলামি চলছে। আমি সিরিয়াসলি নিছি। সহসাই এর ফলাফল দেখতে পাবা।’

কয়েকটি মোটরসাইকেল আর বাইসাইকেল। সাথে একটি অ্যাপ। প্রযুক্তির এই মেলবন্ধন দিয়ে যানজটের নগরী ঢাকাতে ২০১৫ সালে ‘অন ডিমান্ড ডেলিভারি’ সেবা হিসেবে যাত্রা শুরু করে পাঠাও। আলিবাবা গ্রæপের দারাজ ও রকেট ইন্টারনেটের অংশ হিসেবে শুরু করে নিজেদের ই-বাণিজ্য সেবা। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাম লেখায় শেয়ারিং সেবায়। ১০০ মোটরসাইকেল আর ১০০ চালক নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। ২০১৮ সালের রাইড শেয়ারিং সেবা হিসেবেই বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে নগরবাসীর কাছে। ওই বছরের মার্চে পাঠাওয়ের ব্যবহারকারীর সংখ্যা অতিক্রম করে ১০ কোটির মাইলফলক। এরপর একে একে সেবার তালিকায় যুক্ত হয় পাঠাও বাইক, কার, পার্সেল, ফুড, হেলথ এবং শপ।

অর্থায়ন ও সুনামের ঘাটতি নেই; অনীহা আইন মানায়

২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্যাটারি রোড ডিজিটাল হোল্ডিংস এলএলসির কাছ থেকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে পাঠাও। ২০১৭ সালে এ সিরিজ ফান্ডিংয়ের জন্য ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি জিওজেকের কাছ থেকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গ্রহণ করে। পরের বছর ২০১৮ সালে বি সিরিজ ফান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে একই কোম্পানি থেকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গ্রহণ করে। বর্তমানে ৩টি মূল ইনভেস্টরসহ মোট ৫টি ইনভেস্টর রয়েছে পাঠাওয়ের। দেশের গেন্ডি পেরিয়ে ব্যবসা চলছে নেপালের কাঠমান্ডুতে। তবে যেই কুরিয়ার ব্যবসা দিয়ে শুরু হয়েছিল এই প্রতিবেদন লেখা

‘নো-কমেন্ট’ পাঠাও প্রেসিডেন্ট ও সিএফও

একের পর এক ব্যবসায় প্রসারের মাধ্যমে স্টার্টআপ হিসেবে দেশে সুনাম কুড়ালেও প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর অতিক্রান্তের পরও এখন সরকারের নীতিমালা নিয়ে অনেকটাই উন্নাসিক অবস্থানে রয়েছে পাঠাও। যেই কুরিয়ার দিয়ে ব্যবসায় শুরু সেই ব্যবসায়ের লাইসেন্স পর্যন্ত নেয়নি এখনো। অ্যাপের মাধ্যমে অন ডিমান্ড ডেলিভারির পার্সেল সেবা দিয়ে চমক দেখালেও এই সেবাটাও চালিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই। আবার এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান জানতে দফায় দফায় এর পেসিডেন্ট এবং সিএফও’র সাথে যোগাযোগ করা হলেও এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া দেননি সহপ্রতিষ্ঠাতা হুসেন এম ইলিয়াস। পরে প্রতিষ্ঠানটির পেসিডেন্ট এবং সিএফও ফাহিম আহমেদ মুঠোফোনে সাড়া দিলেও এ বিষয়ে অন্য একজন যোগাযোগ করে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। এমনকি অনুমোদন নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা সে প্রসঙ্গেও মুখে কুলুপ এঁটেই থেকেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। তাই প্রেসিডেন্ট ও সিএফও ফাহিম আহমেদের শেষ বাক্য ‘নো-কমেন্ট’ দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের।

পর্যন্তও সেই ব্যবসায়ের লাইসেন্স ছাড়াই দিব্যি ব্যবসায় করে যাচ্ছে। মাঝে কুরিয়ার সেবার মান নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হয়েছে। যেহেতু নিবন্ধনই নেই, তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছেন অনেকেই। অপরদিকে লাইসেন্স না থাকার কারণে তারা ব্যবসার নীতিও ঠিকঠাক মানছে না বলে অভিযোগ লাইসেন্সধারী কুরিয়ার সেবাদাতাদের। তারাও দফায় দফায় অভিযোগ করে কিনারা পাননি। নগদ টাকা পরিবহন, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি এমন নানা কান্ড করেও বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কোনো এক অদৃশ্য শক্তিতে কোনো কিছুতেই গা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টিকে বিস্ময়কর ও হতাশার বলে মন্তব্য করে ই-কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব ঘোষ বলেছেন, প্রায় ৪০০ জন এখন ডিজিটাল কুরিয়ার সেবা দিচ্ছে। কিন্তু লাইসেন্স আছে মাত্র তিনজনের। লাইসেন্স না থাকায় এরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানার বিষয়ে গা করে না। ফলে মার্চেন্টরা তাদের কাছ থেকে ক্যাশ লেনদেন করে। যেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী কমপ্লিটলি নিষেধ। তারা কিছুই ফলো করে না। ফলে ক্লায়েন্ট তাদের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে আমাদেরকে বলে আপনারা ক্যাশ দেন না আরেকজন তো দেয়। এভাবেই তারা ব্যবসায় পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা লাইসেন্স ফি দিয়ে ব্যবসায় করি। ফলে ভ্যাট-ট্যাক্স ঠিকমতো পরিশোধ না করেই তারা ব্যবসায় করে ক্লায়েন্টদের নষ্ট করছে। অবৈধ সুবিধা পেয়ে তাদের মধ্যেও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই পাঠাওয়ে

লাইসেন্সবিহীন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডাক আদান প্রদান করা যাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো এ-সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়েছে, দি পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ১৮৯৮-এর ধারা ৪ বি ও ৪ সি এবং মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা ২০১৩- এর নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সবিহীন মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডাক দ্রব্য গ্রহণ, পরিবহন ও বিলি বিতরণ বেআইনি ও সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভ‚ত।

এর আগে ৩০ জুন ব্যাংকগুলোকে একই নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, লাইসেন্সবিহীন এসব মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডাক দ্রব্যাদি আদান-প্রদান হতে সর্বসাধারণের বিরত থাকতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ১৮ (ছ) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অপরদিকে গত ৬ মে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, দেশে কার্যরত কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় প্ল্যাটফর্মের বিক্রয়কৃত
পণ্য ক্যাশ অন ডেলিভারি ব্যবস্থায় ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এবং তার বিপরীতে পণ্যমূল্য সংগ্রহপূর্বক তা বিক্রেতাকে প্রদান করছে। পাশাপাশি এক ব্যবসায়ী থেকে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে মূল্য ঘোষিত পার্সেল বিতরণ ও কন্ডিশন বুকিং ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যা থেকে উদ্ভ‚ত লেনদেনের নগদ অর্থ কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে আসছে। অর্থাৎ কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মাশুলের বিনিময়ে ক্রেতাকে পণ্য বিতরণপূর্বক আদায়কৃত পণ্যমূল্য বিক্রেতার কাছে পৌঁছানোর যে কর্মকান্ডে নিয়োজিত, তা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনার নিমিত্তে এবং এ ধরনের লেনদেন একটি নীতি কাঠামোর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে ‘কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মূল্য ঘোষিত পণ্য/পার্সেল বিতরণ থেকে উদ্ভ‚ত নগদ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন পদ্ধতি’ শীর্ষক গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অনুসরণপূর্বক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লেনদেনের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২-এর ২ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হিসাব খোলার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কার্যরত কুরিয়ার সার্ভিস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এতদ্ ব্যতীত অন্য কোনোরূপ আর্থিক সেবা প্রদান করতে পারবে না এবং এরূপ ক্ষেত্রে কোনোরূপ ব্যাংকিং সেবা প্রাপ্য হবে না। বর্ণিত লেনদেন পদ্ধতি মোতাবেক কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৯ (১) ঙ ধারার আওতায় বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে।

এর আগে গত বছর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনস্থ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষও এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স গ্রহণ না করেই কুরিয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করছে। এমনকি লাইসেন্সবিহীন কিছু প্রতিষ্ঠান পত্র-পত্রিকায় ও অনলাইনে কুরিয়ার ব্যবসার বিজ্ঞপ্তি ও এজেন্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করছে। এ ধরনের কর্মকান্ড সরকারি নিয়মনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও বেআইনি। তখন সরকারি নিয়মনীতিবহির্ভ‚ত এমন অবৈধ কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছিল সংস্থাটি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯- ২০ বলছে, ২০১৩ সালে ডাক বিভাগের অধীনস্থ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠনের পর প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুরিয়ারের সংখ্যা ছিল ১৯০টি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ মেইলিং অপারেটর কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ৭৫টি। আন্তর্জাতিক মেইলিং অপারেটর কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ৮৫টি এবং অন-বোর্ড মেইলিং অপারেটর কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান আছে ৩০টি।

অপরদিকে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত হালনাগাদ লাইসেন্সের তথ্য অনুযায়ী ডাক বিভাগের অধীনস্থ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে মোট ৭২টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মাত্র ৩১টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স হালনাগাদ করা হয়েছে। নবায়ন করেনি ৪১টি প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স সারেন্ডার করেছে ৪টি প্রতিষ্ঠান। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে সরাসরি এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাইসেন্সবিহীন ৪০০’র বেশি প্রতিষ্ঠান কুরিয়ারের সেবা দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই এফ-কমার্সকে সেবা দেয়। তবে বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, লাইসেন্স ছাড়াসহ দেশে সার্বিকভাবে সক্রিয় কুরিয়ার সেবাদাতাদের সংখ্যা ১২৮টি। এদেরই অন্যতম পাঠাও। লাইসেন্স না থাকায় কুরিয়ার বিধিমালার তোয়াক্কা না করেই দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

তথ্য চুরির দায়েও অভিযুক্ত পাঠাও

কেবল লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসায় পরিচালনাই নয়, যেই অ্যাপের জাদুকরি উত্থানে জনপ্রিয় হয়েছে পাঠাও, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর সেই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার প্রমাণও দিয়েছেন প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা। ওই সময় ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখানো হয় যে, পাঠাওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি ইচ্ছাকৃতভাবে এসএমএস এবং যোগাযোগের তালিকাসহ সংবেদনশীল তথ্যগুলো অনুলিপি করছে। তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে তখন আশিক ইশতিয়াক নামের এক তরুণ দেখিয়েছেন, পাঠাও তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনে থাকা নম্বরের তালিকা, খুদে বার্তা (এসএমএস) এবং ডিভাইসে ইনস্টল থাকা বিভিন্ন অ্যাপের তালিকাসহ বিভিন্ন হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকে। একই সঙ্গে এসব তথ্য পাঠাওয়ের সার্ভার (ধঢ়র.ঢ়ধঃযধড়.পড়স)-এ সংরক্ষিত হয় বলেও দেখান ইমন। পাশাপাশি ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ইনফরমেশন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আরেকটি প্রতিষ্ঠান উইজ রকেট ইনকর্পোরেশনের কাছে যাচ্ছে বলেও ভিডিওতে দেখা যায়। আর এতেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় পাঠাওয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে। ভিডিওটির যথার্থতা সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদ ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাগিব হাসানও তখন সত্যায়ন করেছেন।

অবশ্য পরে পাঠাও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করে, ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলো সুরক্ষিত এবং গোপন রাখা হয় এবং তারা সব শর্ত ও শর্তাবলি অনুসারে অন্যান্য সংস্থার মতোই সেরা রীতি ব্যবহার করে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াই পাঠাও একটি নতুন হালনাগাদ প্রকাশ করে।

কুরিয়ারে মাদক পাচারে আলোচনায় লাইসেন্সহীন কুরিয়ার সেবা

সম্প্রতি ভয়ঙ্কর এলএসডিসহ বিভিন্ন মাদকের কয়েকটি চালান উদ্ধারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেই এসব মাদক দেশে আনা হচ্ছে। কিছুদিন আগেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, মাদক সরবরাহ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র কারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে কুরিয়ার সার্ভিসকে তাদের নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে। রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে লাইসেন্সবিহীন কুরিয়ার সেবাদাতারাই অভ্যন্তরীণ মাদক সরবরাহে বেশি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পাঠাওয়ের যেসব রাইডার মোটরসাইকেলে পার্সেল করেন তারা কোনো চেকিং প্রক্রিয়ার মধ্যে না থাকায় এই ঝুঁকিটা আরো বেড়েছে।

পথে আসছে পাঠাওসহ অন্যরা

২০১৮ সালের ২৪ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া পাঠাও পে নামে মোবাইল ওয়ালেট পরিষেবা চালু করে পাঠাও। চালকদের অর্থ প্রদানে ব্যবহৃত এই অ্যাপটি চালুর কয়েক মাস পর বাংলাদেশ ব্যাংক পাঠাওয়ের এই সেবা বন্ধ করে দেয়। তবে তিন বছর বাদে সম্প্রতি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার বা পিএসপি হিসেবে পাঠাও পে-কে অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পরই চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঠাও পে সেবা চালু করতে অনাপত্তি দেয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রম দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। ফলে এখন নিজেদের অ্যাপের মাধ্যমেই কুরিয়ার, গাড়ি ভাড়া, ফুড ডেলিভারি, কেনাকাটার অর্থ লেনদেন করার বৈধতা পেল পাঠাও। পাশাপাশি আইপে সিস্টেম, ডি মানি, রিকার্সন ও গ্রিন অ্যান্ড রেড টেকনোলজিস লিমিটেডের পর পঞ্চম পিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান হলো পাঠাও। কিন্তু গোড়ার গলদ এখনো সংশোধন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক জানিয়েছেন, লাইসেন্স সেবাদানকারীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে। লাইসেন্সহীন সেবাদাতাদের কারণে যারা বৈধভাবে ব্যবসায় করছেন তারা বদনামের ভাগী হন। তবে সুখের কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা দেয়ার পর অনেকেই সমিতির সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাঠাও দুই বছর আগেই সংগঠনের সদস্য হয়ে লাইসেন্স প্রক্রিয়ার মধ্যে গেছে। তবে কাগজ/নথির কারণে তারা এখনো লাইসেন্স পায়নি। সংগঠনটির মুখপাত্র নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ১৪০টি প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য। চলতি মাসেই সদস্যপদ নেয়ার জন্য মুন্সি এক্সপ্রেস, গেøাবাল এক্সপ্রেস, দারাজ এক্সপ্রেস, স্ট্রিট হাট কুরিয়ার, এস এ পরিবহন, সিকিউরিটি এ আর এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ পার্সেল সার্ভিস, এ অ্যান্ড এক্সপ্রেস এবং সিটি কুরিয়ার সদস্য পদের আবেদন করেছে

Leave a Reply